আর এম রিফাত, শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: তখন ঘড়ির কাঁটায় ৩টা বেজে ৫৩ মিনিট। প্রধান ফটক থেকে অটো ভ্যানে করে টিএসএসসিসির দিকে আসছিলাম। এমন সময় দেখা যায় ডায়না চত্বরে সবুজ গালিচার উপর কিছু শিক্ষার্থীরা হইচই ও দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত।
কোন কিছু না ভেবে ছুটে চললাম সেখানে। একজন দম নিয়ে জুতা চুরি করে ঘরে ফেরার চেষ্টা করছে আবার একদল চোরকে ধরার জন্য ধাওয়া করছে। তাদের দেখে মনে হবে তারা জুতা চোর। আসলে তারা কোন জুতা চোর নয়।
ফিরে গেছে তারা শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত সময়ের জুতা চোর খেলায়। অনেকে বসে বসে এমন দৃশ্য উপভোগ করছে। অন্য সবাই যখন ক্লাস-পরীক্ষা,
এসাইনমেন্ট নিয়ে ক্লান্তিকর সময় পার করছে, কেউ ভালবাসার মানুষ নিয়ে ব্যস্ত, আবার কেউ বাসের জন্য গল্পের বই পড়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। ঠিক তখন আরেকদল ব্যস্ত জুতা চোর খেলায়।
বলছিলাম শৈশবের ছোঁয়ায় মাতোয়ারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের কথা। জুতা চোর খেলায় অংশগ্রহণ করা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২১
শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
তখন বিকেল ৩টা। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বরে গল্প করছিলেন তারা। গল্পের সাথীরা সবাই শহরে থাকে, কেউ কুষ্টিয়া কেউবা ঝিনাইদহে। শহরের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস থেকে বাস ছাড়বে সাড়ে ৪টার দিকে। মাঝখানে এত সময় বসে থাকা কেমন যেন অস্বস্তিকর লাগছে। হঠাৎ তাদের মধ্যে থেকে এক সহপাঠী বলে উঠলো চল সময় তো অনেক আছে। শৈশবে যেমন জুতা চোর খেলতাম, চল আমরা আগের মত শৈশবে ফিরে যাই। যেই ভাবা সেই কাজ। বন্ধু-বান্ধবরা দুইভাগ হয়ে গেল। পুরনো দিনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছায় জুতা চোর খেলায় মত্ত হয়ে পড়লো তারা। বাসের হর্ণের শব্দে তাদের সময় ফুরিয়ে আসে। খেলা থামিয়ে দিয়ে যে যার মত নিজেকে গুছিয়ে নিল। সেই শৈশবের ঘরে ফেরার মত ঘরে ফেরে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীই শৈশবকাল কাটিয়েছে অজপাড়াগাঁয়ে। সুযোগ হয়েছিল অনেক গ্রামীণ খেলা বৌছি, কানামাছি, গোল্লাছুট, জুতা চোর, ডাঙ্গুলি, কাবাডিসহ নানা ধরণের দেশীয় খেলায় মত্ত থাকার। প্রতিদিনের ওই এক রুটিন ছিলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে ক্লাস ধরা, দুপুরে স্কুল ছুটির পর বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া, গোসল, আর তারপর আম্মুকে জ্বালাতন। বিকেল হতে না হতেই ছুটে চলতো খেলতে! আর সন্ধ্যার আযানের সাথে সাথে সেই খেলা যে অবস্থাতে থাকতো, বন্ধ করে বাসায় দৌড়! এভাবে শৈশবে নিত্যদিন কাটতো সবার।
খেলাটির নিয়ম, সবার জুতাগুলো খুলে একটা লাইন এ রাখা হতো। খেলাটি দুটি দলে হতো। একদল লাইন এ জুতা পাহারা দিত। তারা লাইন এর এপারে আসতে পারবে না। আর অন্য দলের দায়িত্ব থাকত জুতা চুরি করা। সবাই মারা পড়লে দুইপার দল বদল করত। খেলা শেষে যেই দল সব জুতা চুরি করবে, তারাই জিতবে!
জুতা চোর খেলার অনুভূতি প্রকাশ করে অমি নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এই সময়টি ফিরে পেয়েছি। কখনো ভাবিনি এমন একটি আনন্দঘন মুহুর্ত অতিবাহিত করবো। জুতা চোর খেলাটি উপস্থিত সবাইকে শৈশবের ছোঁয়া দিয়েছে। শৈশবকে মনে মনে ফিরে পাওয়ার কল্পনা এঁকেছি।
সাদিয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, শৈশবে কাটানো এমন মুহূর্ত গুলো ভূলে গিয়েছিলাম। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কাটানো সময়গুলো অতীতের এই দৃশ্যের সাথে আজকের মিতালী ঘটায় । সকলের মাঝে একটু হলেও প্রানের ছোঁয়া দিয়েছে। এমন সময় বারবার ফিরে আসুক।
ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে গ্রামীণ কোলাহল আজ বিলুপ্তির পথে। বর্তমান কালের শিশুরা মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে অতীতের স্বর্ণালি সময় গুলোর ছোঁয়া পায়নি। ১০ বছর আগে যখন শিশুরা স্কুল শেষে মাঠঘাটে খেলাধূলায় বিকেলের সময় কাটাতো। এখন শিশুদের শৈশব কাটে মোবাইল গেমসে। একদিকে যেমন সংস্কৃতি হারানোর পথে। অন্যদিকে গেমসের মাধ্যমে মাদকসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে তারা। আজকের এই জুতা চোর খেলার মাধ্যমে অতীত গুলো বর্তমানে আসুক। সেই সোনালী সময়ে ফিরে গিয়ে দেশীয় সংস্কৃতি বেঁচে থাকুক এই প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।